ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর অবৈধ বাঁধ কাটার দাবী করায় জনতার উপর ফাঁকা গুলি, রাতভর আতংক

চকরিয়া অফিস :::

চকরিয়ার সাধারণ মানুষ এবার  মুখ খুলতে শুরু করেছে। প্রবল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানবাসি মানুষের একটাই দাবী মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের মৎস্যঘেরটি কেটে দিয়ে উম্মুক্ত করে দেওয়া। ইতোমধ্যে মৎস্যঘেরটি কেটে দেওয়ার দাবীতে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা ও চকরিয়া পৌরসভার ৫নং ও ৬নং ওয়ার্ডের শতশত মানুষ ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। মঙ্গলবার গভীর রাত দশটার দিকে শতাধিক মানুষ নৌকা নিয়ে ঘেরটি কাটলে গেলে সন্ত্রাসীদের শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। ওইসময় অতিরিক্ত গুলিবর্ষণে সামনে এগুতে পারেনি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে ওইসময় কেউ হতাহত হয়নি।

Chakaria-PcMizbah-1চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা জিয়াবুদ্দিন সিকদারের টেক এলাকার লোকজন জানান, মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম সরকারি বরাদ্দের টাকা দিয়ে প্রায় ৬’শ একর এলাকায় মাটির বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করছেন। মৎস্যঘেরের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। এতে বন্যার পানি নতুন নতুন এলাকায় ডুকে পড়ছে। দ্রুত সময়ে পানি যেতে পারছে না। সন্ধ্যার দিকে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বসতঘর নিমজ্জিত হয়। তখন বানবাসিদের একটি মাত্র কথা, মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের মৎস্যঘেরই পানি চলাচলের জন্য একমাত্র সমস্যা। সমস্যা লাগবের জন্য পৌরসভার বুধবার রাত ৯টার দিকে ৫নং ও ৬নং ওয়ার্ডের শতাধিক জনতা পানি সরানোর উদ্দেশ্যে অবৈধ মৎস্যঘেরটি কাটার দাবীতে জড়ো হয় সওদাগরঘোনা জিয়াবুদ্দিন সিকদারের টেকে।

এসময় চিরিঙ্গা ইউনিয়নের মৎস্যঘের রক্ষা কমিটি নামের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ভুক্তভোগীদের ফাঁকা গুলি চালিয়ে ধাওয়া করে। এভাবে চলে রাতভর গুলিবর্ষণ। শতাধিক রাউন্ড গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসী চলে আসে। তবে মৎস্যঘেরটি সুযোগ পেলেই কেটে দেবে বলে জানান এলাকাবাসী। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বিগত সময়ে বন্যা হলেও উপজেলা পরিষদ চত্বর, থানা কম্পাউন্ডে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়নি। এই প্রথম সরকারি গুরুত্বপূর্ন কার্যালয়ে বন্যার পানি থাকায় অফিস করতে পারছে না কর্মকর্তারা। থানা এলাকায় হাটু পরিমাণ রয়েছে। তারাও মুখ খুলে কিছুই বলছে না।

আতংকিত সওদাগরঘোনা জিয়াবুদ্দিন সিকদারের টেক এলাকার লোকজন জানায়, ভারি বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের পানি জমাট বদ্ধ হয়ে সন্ধ্যা ৫টার দিকে পৌরসভার পালাকাটা ও করাইয়া ঘোনা সহ উপজেলা পরিষদ চত্তর এলাকা প্লাবিত হয় । সন্ধ্যার দিকে পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যার  সময় বসতঘর নিমজ্জিত হয়। তখন বানবাসিদের একটিি মাত্র কথা মাতামুহুরী নদীর মৎস্য ঘেরই পানি চলাচলের জন্য একমাত্র সমস্যা। এ সমস্যা লাগবের জন্য পৌরসভার সংশ্লিষ্ট এলাকার ৩/৪শতাধীক জনগণ পানি সরানোর উদ্দ্যেশ্য্ অবৈধ বাঁধটি কাটার দাবীতে জড়ো হয় জিয়াবুদ্দিন সিকদারের টেকে। এ সময় চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বাঁধ রক্ষা কমিটি নামের একদল সসস্ত্র সন্ত্রাসী ভুক্তভোগীদের ফাঁকা গুলি করে ধাওয়া করে। এ ভাবে চলে রাতভর। শতাধিক রাউন্ড গুলির শব্দে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, গত কয়েকদিনের ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় বন্যার পানি ডুকে পড়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঢলের পানি বাড়তে থাকায় আরও ঘর-বাড়ি নদীতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বানবাসিরা। শতশত বানবাসি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বানবাসি মানুষের ঠাঁই হচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কোচপাড়ায় মাতামুহুরী নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ১০টি কাচা ও সেমি পাকা ঘর নদীতে ভেসে গেছে।

গতকাল বুধবার সকালে চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বাড়ি পাড়ার জয়নাল আবেদিনের পাকা দালানটি বন্যার পানির তোড়ে নদীতে ভেসে গেছে। তবে ওইসব বাড়ির কোন মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। বর্তমান নদী গর্ভে বিলিন হওয়া বাড়ির লোকজন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। গতকাল বুধবার মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা এলাকার ৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানির কারণে শতশত বাড়ি-ঘর ঢুবে রয়েছে। ওই এলাকার সড়ক গুলোতে পানিতে ঢুবে থাকায় সহজেই যানচলাচল করতে পারছে না। বানবাসি মানুষের অভিযোগ, বন্যায় গত দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ত্রান সামগ্রী এলাকায় আসেনি। বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজের উদ্যোগে কিছু খাবার দিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান তারা।

কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, মাতামুহুরী খালে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করায় এবং ঢেমুশিয়া জলমহালের স্লুইচ গেইট ও চোয়ারফাঁড়ি স্লুইচ গেইট বন্ধ করে সংকট তৈরী করায় স্বাভাবিকভাবে পানি অপসারণ হতে পারছে না। এতে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

গুলিবর্ষনের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বলেন, রাতে ওই এলাকায় গুলিবর্ষনের কোন ঘটনা আমরা শুনিনি। কেউ আমাদের কাছে এ ধরন অভিযোগও দেয়নি।

পাঠকের মতামত: